সিরাজগঞ্জ থানার কাওয়াকোলা গ্রামে আবু লোহানীর আদি বাসস্থান ছিল। কিন্তু যমুনার ভাঙ্গনে কাওয়াকোলা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে উল্লাপাড়া থানার শোনতলা গ্রামে তারা বসতি স্থাপন করেন। আবু লোহানী -এর বড় ছেলে ফতেহ লোহানী একাধারে সাহিত্যিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, নাট্যাভিনেতা ও ঢাকা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত কথিকা লেখক ছিলেন। ফতেহ লোহানী কলকাতার নাট্যাঙ্গনে অভিনয় করেছেন এবং ‘কিরন কুমার’ ছদ্ম নাম নিয়ে চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। সাবেক পূর্ব পাকিসত্মানে আব্দুল জববার খানের পাশাপাশি ফতেহ লোহানীও চলচ্চিত্রের গোড়াপত্তনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। ফতেহ লোহানীর পরিচালিত ‘আসিয়া’ ছায়াছবিটি রাষ্ট্রীয় পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছিল। ফতেহ লোহানীর কবিতা ছিল খুবই হৃদয়গ্রাহী। তাঁর সম্পাদিত ‘অগত্যা’ সাহিত্য মাসিকটি অল্প দিনের মধ্যে দেশব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠে। মওলানা আকরম খাঁর মাসিক ‘মোহাম্মদী’, কবি আবদুল কাদিরের সরকারী মাসিক পত্রিকা ‘মাহে-নও’ ইত্যাদির পাশে ফতেহ লোহানীর মাসিক ‘অগত্যা’ সম্পূর্ণ আলাদা ইমেজ নিয়ে পাঠক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তবে ফতেহ লোহানীর কোন বই প্রকাশিত হয়নি।
ফজলে লোহানী
১৯২৭ সালে উল্লাপাড়া থানার শোনতলা গ্রামে প্রখ্যাত আবু লোহানীর ঔরষে ফতেহ লোহানী, ফজলে লোহানী, কামাল লোহানী ও হুসনা বানু প্রমুখ প্রতিভাশালী ছেলেমেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের টিভি রিপোর্টার হিসাবে ফজলে লোহানী মতো প্রতিভার সাক্ষাৎ আর কখনো মিলবে কিনা সন্দেহ আছে। ‘‘যদি কিছু মনে না করেন’’ এই শিরোনামে প্রতি মাসে পাক্ষিক দুটি টিভি রিপোর্টিং দেখার জন্য লক্ষ লক্ষ টিভি দর্শক বিপুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতো। ভয়েস অব আমেরিকা ও রয়টারের জগত বিখ্যাত টিভি রিপোর্টারদের সমকক্ষ ফজলে লোহানী অপূর্ব ভঙ্গিমায় টিভি পর্দায় হাজির হয়ে দর্শকবৃন্দের বিপুল করতালির মধ্যে কখনো হাসি আনন্দ, কখনো বেদনা ভারাক্রামত্ম টিভি রিপোর্টিং এর মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করে রাখতেন। তার অপর একটি টিভি রিপোটিং বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মওলানা ভাসানী যখন মহীপুরে বিশাল প্রজা সম্মেলন করছিলেন, তখন ফজলে লোহানী গিয়েছিলেন সেই মহীপুরে, মওলানা ভাসানাীর সাক্ষাৎকারের উপর টিভি রিপোর্টিং করবার জন্য। পরে ফজলে লোহানীর সেই রিপোর্টটি ‘মহীপুরের প্রামত্মরে’ নামে পত্রিকায় প্রকাশিত হলে বিভিন্ন মহলে তা ব্যাপক আলোচনার বস্ত্ততে পরিণত হয়েছিল। তিনি ‘পেনশন’ নামে একটি ছায়াছবিরও প্রযোজনা করেন। মাত্র ৫৮ বছর বয়সে ১৯৮৫ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।